বাঙালি আসলেই একটা অসাধারন কসমোপোলিটান জাতি। বিশ্বায়ন কারে বলে, কেউ আমাদের কাছ থেকে শিখুক। বাঙালি বিবিসির ইংরেজি টান নকল করে ইংরেজ হতে চায়, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি লাগায়া সাদা চামড়া হতে চায়, ক্রিকেটে হইতে চায় পাকিস্তানি, প্রেম-ভালোবাসা করতে চায় হিন্দি সিনেমার মত, বিয়া থেকে পারলে কবর দেয়া পর্যন্ত প্রোগ্রাম করে হিন্দি গানের তালে, পয়লা বৈশাখ বাদ দিয়া হইতে চায় আরব, চুরির টাকা হালাল করে বুড়া হয়ে মরার বাড়ি কিনে মালয়শিয়ায়।
কিন্তু দুঃখ – কেউ, না ইংরাজে, না পাকিস্তানিতে, না ইন্ডিয়ানে, না আরবে, না মালয়ে – কেউ ‘শালার বাঙালি ছোটোলোকের বাচ্চা, ফকিন্নির পুত’ ছাড়া আর কিছুই ভাবে না, ভাববেও না।
লন্ডনের রাস্তায় সে গান্ধা, আনকালচারড আপদ, পাকিস্তানের চোখে সে মাদারচোদ বাঙ্গাল, ইন্ডিয়ানে তারে হোটেলে ঢুকতে দেয় না, আরবে তারে গালে ঘষে নিজের জুতার কাদা সাফ করার জন্তু ভাবে, মালয়শিয়ায় তারে যেই নামে ডাকে তার অর্থ লিটারালি দাঁড়ায় ‘লেবার’।
কিন্তু এই প্রত্যেক হারামজাদা জাতের জৌলুসের পিছে বাঙ্গালির রক্ত আছে। বাকিংহাম প্যালেসের ইঁটে ইঁটে বাঙ্গালির চোষা রক্ত দিয়ে গাঁথুনি দেয়া আছে, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের প্রত্যেকটা রড বাঙ্গালির রক্ত ঘাম বসানো, কাতারের আমিরদের অলস, বিকৃত বিকালের সরঞ্জাম ৩০ বছর ঘর ছেড়ে, বাপ-মা-স্ত্রী সন্তান ছেড়ে এক ঘরে ১০ জনে গাদাগাদি থাকা বাঙালি রক্ত পানি করে এগিয়ে দেয়া, গান্ধা করাচির রাস্তায় পিচ ঢালা হয়েছে বাঙ্গালির কলিজা চিপে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঢেলে – যেটা হারানোর ভয়ে তিরিশ লাখ সেই বাঙ্গালিরেই খুন করতে হাত কাঁপে নাই।
তাও বাঙ্গালি স্বপ্ন দেখে – সে একদিন অন্য কিছু হবে। পত্রিকায় ইংরেজের পাসপোর্ট থাকলেও তারে বাঙ্গালি-ইংরেজ কেনো বলা হয়, খাঁটি ইংরেজ কেনো বলে না তাই নিয়া কান্নাকাটি করবে, পাইক্যা হারামজাদার সাথে উর্দু মারাবে, ইন্ডিয়ানের সামনে হিন্দি মারাবে, নববর্ষরে ‘মালাউনি কারবার’ বলে নিজেরে কল্পনায় আরব ভাববে।
যার নিজের পরিচয়ের প্রতি সন্মান নাই, তারে দুনিয়া ইতর, জন্তু ছাড়া আর কি ভাববে?
মন্তব্য করুন