সময়ের চাহিদা পূরণ করতে দিন দিন উন্নত দেশগুলোর বৈশ্বিক রাজনীতির পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন হওয়ায় ভূগোলবিদদের কদর বেড়ে চলেছে।
জলবায়ুতে ভূগোল, কৃষিতে ভূগোল, দুর্যোগ মোকাবিলায় ভূগোল, নগর ও গ্রাম পরিকল্পনায় ভূগোল, ডেভেলপমেন্টে ভূগোল, এমনকি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং যুদ্ধকৈশলে
ভূগোল ও ভূগোলবিদদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই একজন সফল ভূগোলবিদ হতে পারলে ব্যাপক যশ-খ্যাতি অর্জন সম্ভব। বিস্তারিত
ভূগোলবিদ কে :
ভূগোলবিদ বলতে বোঝা হয় সেই প-িত ব্যক্তিকে, যার অধ্যয়ন ও গবেষণার ক্ষেত্র হচ্ছে ভূগোল, পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানবসমাজ। যদিও ঐতিহাসিকভাবে যিনি মানচিত্র তৈরি করতেন তাকেই ভূগোলবিদ বলা হতো; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানচিত্র তৈরি করা শিক্ষার একটি ক্ষেত্র, যা মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা নামে পরিচিত এবং এটি ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত একটি অধিক্ষেত্র। ভূগোলবিদরা কেবল পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ বা মানবসমাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাই করেন না, অধিকন্তু তারা এই দুয়ের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়েও গবেষণা করেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ মানবসমাজে কীভাবে অবদান রাখছে’ তা নিয়ে গবেষণা করার সঙ্গে সঙ্গে তারা ‘মানবসমাজ কীভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করছে’ সেটিরও অনুসন্ধান করেন। বিশেষত প্রাকৃতিক ভূগোলের গবেষকরা প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে অধ্যয়ন করেন; বিপরীতে মানবীয় ভূগোল বিশারদরা মানবসমাজ সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন। আধুনিক ভূগোলবিদরাই জিআইএসের (ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থা) প্রাথমিক পরিচর্চাকারী, যারা প্রায়ই স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের পরিবেশ ও প্রকৌশল সংস্থায় নিযুক্ত হন।
কেন ভূগোলবিদ :
মানুষ প্রথম যে অভিযানে চাঁদের বুকে সভ্যতার পায়ের ছাপ এঁকে দিয়ে আসে, সে অভিযানে ভূগোলবিদদের অবদান ছিল সবার আগে। একজন ভূগোলবিদ একাধারে ভূবিজ্ঞান থেকে শুরু করে জলবায়ু তত্ত্ব, সমুদ্র তত্ত্ব, উদ্ভিদ-ভূগোল তত্ত্ব, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বাস্তুসংস্থান বিদ্যা, দুর্যোগ মোকাবিলা, নগর পরিকল্পনা, গ্রামীণ পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় যেমন ভূগোলবিদের প্রয়োজন, তেমনি জলে-স্থলে-শূন্যে যে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের বিকল্প নেই। ভূগোলবিদদের কাজের পরিধি এখন শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা এখন পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশ জয় করতে গেছেন। চাঁদের ম্যাপিং তাদের জিওগ্রাফাররা করে দিয়েছেন। মঙ্গলের ম্যাপিংও তাদের জিওগ্রাফারদেরই করা।
পড়াশোনা :
বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়টি পড়ানো হয়। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া যায়। অল্প কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও বিষয়টি পাঠ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর দেশের বাইরে পড়ালেখার সুযোগ তো রয়েছেই।
প্রস্তুতি :
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত থাকলে প্রথমেই দরকার একটি সুবিন্যাস্ত পরিকল্পনা। কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রাখার আগেই ঠিক করে নিন ভবিষ্যতের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়টি হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ।
চাকরির সুযোগ :
ভূগোল বা ভূগোল সম্পর্কিত বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট একজন ভূগোলবিদ বাংলাদেশেই একটা খুব ভালো মানের চাকরি জুটিয়ে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জেনারেল সার্ভে অব বাংলাদেশ, স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশন (স্পারসো) হতে পারে সবার প্রথম পছন্দ। এ ছাড়া যেসব এনজিও পরিবেশ, জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে, তারাও একজন মেধাবী জিওগ্রাফারকে অত্যন্ত সম্মানজনক বেতনে চাকরি দিয়ে থাকে। আর ভূগোল বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিলে দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও থাকবে সোনালি ভবিষ্যতের হাতছানি। জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করার সুযোগের পাশাপাশি কাজের সুযোগ মিলতে পারে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), ইএসএ (ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি), সিএনএসএ (চাইনা ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), জেডএএক্সএ (জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি) ও আরএফএসএতেও (রাশিয়ান ফেডারেল স্পেস এজেন্সি)।
আয়-রোজগার:
সাধারণত দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভূগোল বা ভূগোল সম্পর্কিত বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট একজন ভূগোলবিদের বেতন সরকারি স্কেলেই ধার্য করা হবে। মোটা দাগে বলতে গেলে, সে বেতনের পরিমাণ প্রাথমিকভাবেই প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। চাকরির মেয়াদ শেষ হতে হতে সেই অঙ্কের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওগুলোয় বেতন শুরুই হবে ৫০-৬০ হাজার টাকার মতো থেকে। চাকরির পূর্ণ মেয়াদ শেষে এ অঙ্কটি দাঁড়াবে লাখের কোটায়। তবে দেশের বাইরের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা। সঠিকভাবে গড়া একটা একডেমিক ক্যারিয়ার থাকলে বেতন হতে পারে ধারণারও বাইরে।
মন্তব্য করুন